মোশাররফ করিমকে কাস্ট করার পর চাপ বেড়ে যায় : ফারুকী
একটি নাটকই বদলে দিয়েছে অভিনেতা মোশাররফ করিমের জীবন। বদলে গেছে তার পুরো ক্যারিয়ার। সেই নাটকটি দেখেননি এমন দর্শক কমই আছেন। বলছি মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ক্যারাম’ নাটকের কথা।
১৯৭১ সালের এই দিনেই (২২ আগস্ট) ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন মোশাররফ করিম। আজ তার জন্মদিন। বিশেষ এই দিনে মোশাররফ করিমের ক্যারিয়ার উত্থানের স্মৃতিচারণ করেছেন তারকা নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
ফারুকীর স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো-
আমি বাংলাদেশে যাদের সঙ্গে কাজ করেছি, তাদের মধ্যে চঞ্চল চৌধুরী, মোশাররফ করিম, নুসরাত ইমরোজ তিশা, অপি করিম, তাসনিয়া ফারিণ, শাহীর হুদা রুমি- এই কজন অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতাগুলো নিয়ে মাঝেমধ্যে লিখতে ইচ্ছা করে। পরে আর লেখা হয় না।
আজকে মোশাররফ করিমের জন্মদিন উপলক্ষে মনে হলো, এক কিস্তি লেখা যায়। এভাবে এক এক করে চঞ্চল ভাই, তিশাসহ সবার জন্মদিনে একটা করে লেখা চেষ্টা করতে চাই।
মোশাররফ করিমের সঙ্গে আমার প্রথম কাজ ক্যারাম! ক্যারাম কাজটা মূলত দুইটা জিনিসের অনুপ্রেরণায় বানানো। প্রথমটা হলো, ছোটবেলায় ক্যারামে আমার নিদারুণ ব্যর্থতা। মাসুদ, বাবলু, এমনকি জাহাঙ্গীরের কাছেও হারতাম। কিন্তু পরাজয়টা কখনোই মানতাম না। দ্বিতীয় অনুপ্রেরণা হচ্ছে আমাদের শুটিংয়ের বাড়ির ক্যারাম টুর্নামেন্ট। আমি আর আমরা সব ভাই-বেরাদর এক সঙ্গে থাকতাম সেখানে, এটা সবাই জানেন।
সেই আবাসিক ক্যাম্পে আমরা আবিষ্কার করি, কচি খন্দকার মোটামুটি আমার ছোটবেলার বুড়ো ভার্সন। তখন আমরা প্রতি খেলায় হারার পর কচিকে অত্যাচার করার নানা সৃজনশীল উপায় আবিষ্কার করি। কচির খেপেখুপে প্রায় প্রতিদিনই আমাদের ক্যাম্প ছেড়ে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়। আমি ঠিক করলাম এই সব নিয়েই ক্যারাম নামে একটা টেলিফিল্ম বানাব। কচি খন্দকারের প্রতি অত্যাচারের প্রতিদান হিসেবে তাকে স্ক্রিপ্ট রাইটার ক্রেডিট দিই। যদিও স্ক্রিপ্ট লেখা সেশনের সঙ্গে তার আদতে কোনো সংস্পর্শ ছিল না
তখন আমি স্ক্রিপ্ট লেখি সোফায় শুয়ে শুয়ে। লেখি না আসলে, দৃশ্য বলি! মাহমুদ আর সুজন সেটা কাগজে কপি করে। স্ক্রিপ্টের মাঝপর্যায়ে মোশাররফ করিম আসেন আমাদের ক্যাম্পে। তাকে কাস্ট করার পর আমার ওপর চাপ বেড়ে যায়।
একজন সাংবাদিক ফোন করে বললেন, বস আপনি শিওর তিনি (মোশাররফ করিম) পারবেন? তিনি কিন্তু প্রমিনেন্ট কেউ না। আমি বললাম, হি উইল বি প্রমিনেন্ট প্রেটি সুন। সেই সাংবাদিক আমার ফ্রেন্ডলিস্টেও আছেন।
তারপর শুটিংয়ে যাই কুমিল্লায়। প্রথমদিন তিনি (মোশাররফ করিম) খুবই চাপে ছিলেন। কারণ, নতুন ইউনিট, নতুন কার্যপদ্ধতি। আমি তখন কৌশলে কম চাপওয়ালা দৃশ্যগুলো করতে থাকি। আর তাকে আমার সিস্টেমের মধ্যে ধীরে ধীরে ঢোকাতে থাকি। এটা একটা প্রক্রিয়া, যেটা শুধু রিহার্সেল করে সম্ভব না। এটা হচ্ছে একটা হোলিস্টিক অ্যাপ্রোচ। যেখানে আমরা আলোচনা করি কবিতা নিয়ে, রাজনীতি নিয়ে, দেশ নিয়ে। এসব করতে করতে কখন যে আলগোছে আমরা একজন আরেকজনের মাথার ভেতরে ঢুকে বসে যাই। এই ঢোকাটা হয়ে গেলে, বাকিটা তো ইশারায় হয়ে যায়।
ক্যারাম আর ৪২০’র পর ঐ সাংবাদিক ভাইটাই আমাকে এক অনুষ্ঠানে বলে, না বস, মোশারফ ইজ আ জিনিয়াস। আজকে সবাই জানে হি ইজ আ জিনিয়াস। দীর্ঘায়ু হন মোশারফ ভাই। আর ভালো ভালো কাজ করেন। ইউ হ্যাভ আ লট টু অফার।’’
প্রসঙ্গত, অভিনয়গুণে দর্শক হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন মোশাররফ করিম। টিভি নাটকে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পাওয়া এই তারকা বড় পর্দায়ও বাজিমাত করেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :